গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়


গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় ? মা ও শিশুভয়কে সুস্থ থাকতে হলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, যেকোনো ধরনের বীজ , সিমের বিচি , ডাল ও পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন কলা খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়.webp

একটি শিশুর আসল বৃদ্ধি তার মায়ের গর্ভ অবস্থাতেই হয়ে থাকে সে যেন প্রচুর পরিমাণে পানীয, মিনারেল, প্রোটিন, ভিটামিন যুক্ত খাবার শিশুর মস্তিষ্ক এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ সময় একটি সঠিক ডায়েট প্ল্যান মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।

পোস্ট সূচিপত্র ঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় তা জানা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যাবশকীয় । কেননা শিশুর ব্রেনের 25% বিকাশ তার মায়ের গর্ভেই হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে শিশুকে এবং মাকে সুস্থ থাকতে অবশ্যই সুষম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে সর্বদা । 

সুষম জাতীয় খাদ্য বলতে বোঝানো হয়েছে এমন একটি খাদ্য পরিকল্পনা যার মধ্যে শর্করা, প্রোটিন , ভিটামিন , মিনারেল ও চর্বি জাতীয় খাবার সঠিক পরিমাণে থাকবে । যেমন সকল খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রোটিনকে প্রাধান্য দেওয়া হয় কেননা শিশুর  শারীরিক বিকাশ এর প্রধান উৎস প্রোটিন যেমন - দুধ ডিম , মাংস ।

এছাড়াও সুষম খাদ্যের মধ্যে পরিমাণমতো সরকার অর্থাৎ ভাত বা রুটি , অবশ্যই এক প্লেট ফলমূল ও শাকসবজি থাকা বাধ্যতামূলক । প্রোটিনের সরকারের সাথে যথেষ্ট পরিমাণে মিনারেল জাতীয় পদার্থ প্রয়োজন যা ফলমূল শাকসবজি ও পানি থেকে পাওয়া যায়। একটি সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা শিশুকে গর্ভ  অবস্থায় বুদ্ধিমান করে তুলতে পারে

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর যত্ন ব্যবস্থা

মা ও শিশুর যত্নের সর্বোত্তম অবস্থা হচ্ছে গর্ভাবস্থা । এই সময় শিশু এবং মার উভয়ের ই বিশেষ যত্নের প্রয়োজন । গর্ভাবস্থায় যত্নই নির্ভর করে পরবর্তীতে একটি শিশু স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করবে কিনা এবং মা সুস্থ থাকবে কিনা । চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু দৈনন্দিন নিয়ম -

  • পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ - সকল ধরনের খাদ্য সঠিক পরিমাণে গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা উচিত । পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম - প্রতিদিন অন্তত আট থেকে নয় ঘন্টা রাতে ঘুমের প্রয়োজন । এই সময়ে শরীরে হরমোনের ব্যালেন্স নির্ধারণ করা হয় । এর সাথে দিনের বেলা দুই থেকে তিন ঘন্টা বিশ্রাম অথবা হালকা ঘুমের প্রয়োজন
  • চলাফেরের সাবধানতা - গর্ভধারণের পর প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস খুবই সাবধানে সাথে চলাফেরা করা উচিত এবং পিচ্ছিল জায়গা থেকে দূরে থাকা উচিত
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা - সময় অনুযায়ী মাকে জীবাণু নাশক মূলক অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে থাকা উচিত যা বহিরাগত যে কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে মা ও শিশু উভয়কে রক্ষা করবে
  •  ভ্রমণ থেকে বিরতি থাকা - গর্ভধারণের প্রথম ও শেষের তিন মাস যে কোন ধরনের ভ্রমণ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং বাসায় সাবধানতার সাথে চলাফেরা করতে হবে
  • সঠিক সময় টিকা গ্রহণ - বাচ্চা গর্ভাবস্থায় সঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের টিকা রয়েছে যা গর্ভকালীন অবস্থায় জরুরি যেমন রুবেলা , কোভিড ১৯ ইত্যাদি এ জাতীয় টিকা ।
  • প্রসবের প্রস্তুতি নেওয়া - যেকোনো সময় শিশু প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা
  • শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতী খেয়াল রাখা - কখনো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে , প্রেসার হাই হয়ে গেলে , খিচুনি মনোভাব দেখা দিলে , অতিরিক্ত ঘাম হলে সাথে সাথে ডাক্তারের নিকটবর্তী হতে হবে । 

কেন গর্ভাবস্থায় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হয়

গর্ভাবস্থায় যে থাকাকালীন সময়ে শিশু মায়ের শরীর থেকেই সম্পূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে । এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ খাদ্য পরি কল্পনা ।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়.webp

 মা ও শিশু উভয়েরই পুষ্টি গ্রহণের চাহিদাফ বেড়ে যায় কেননা পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে ঃ

  • গর্ভে শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে হয় অর্থাৎ শিশুর অস্থির এবং মাংসপেশী শক্ত ও শিথিল হয় ।
  • শিশুস্নায়ু ও মস্তিষ্ক পুষ্টি গ্রহণের জন্য সুষ্ঠুভাবে বিকাশিত হয় এবং মজবুত হয় ফলে শিশু সুস্থ থাকে ।
  • মায়ের শরীর থেকে শিশু পুষ্টি গ্রহণ করার ফলে মায়ের শরীরে যে ঘাটতি থেকে যায় তা র পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণ হয়ে থাকে ।
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে মা যে কোন ধরনের রোগ বালাই থেকে বেঁচে থাকে এবং ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে ।
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকে যা শিশু এবং মার শারীরিক বৃদ্ধি জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
  •  মায়ের দেহে পুষ্টি সঞ্চিত আকারে থাকলে বাচ্চা প্রসবের সময় বাচ্চা এবং মায়ের ক্ষতি কম হয় ।
  • পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর জন্মগত ত্রুটি রোধ হয় ।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে মা এবং শিশুর শরীরে রক্তের সমতা ঠিক থাকে ।

asdএকটি গর্ভবতী নারীর জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা


সময় খাবার (উদাহরণ)
সকাল শুরুর পূর্বে এক গ্লাস পানি বা হালকা চা, ৪-৫টি ভেজানো কাঠবাদাম, ১টি খেজুর বা কিশমিশ।
সকালের নাস্তা ২ টি লাল আটার রুটি বা ১ বাটি ওটস/উপমা, ১টি সেদ্ধ ডিম অথবা মসুরের ডাল/ছোলা সেদ্ধ, সাথে অল্প পরিমাণে সবজি।
মিড-মর্নিং স্ন্যাক ১টি ফল (কলা, আপেল বা পেয়ারা) অথবা এক বাটি দই/টক দই (কম ফ্যাটযুক্ত)।
দুপুরের খাবার ১ বাটি লাল চালের ভাত, ১ বাটি ডাল, চর্বিহীন মাছ বা মুরগির মাংস (ছোট এক টুকরা), ২-৩ প্রকার সবজি ও ১ বাটি সালাদ।
বিকালের স্ন্যাক হালকা সবজির স্যুপ অথবা মুড়ি/খই/ছোলা মাখানো, ১ গ্লাস দুধ।
রাতের খাবার রুটি বা অল্প ভাত, ডাল, ছোট মাছ বা ডিম, সবুজ শাক। (ঘুমের ২-৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত)।
শোবার আগে ১ গ্লাস উষ্ণ দুধ বা এক মুঠো বাদাম/বীজ (যদি প্রয়োজন হয়)।
খাদ্যের প্রকারভেদ কেন দরকারি খাবারের উৎস (প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন)
প্রোটিন শিশুর শারীরিক গঠন ও অঙ্গের বৃদ্ধিতে চর্বিহীন মাংস, মুরগি, মাছ (কম পারদযুক্ত), ডিম, ডাল, মটরশুঁটি, বাদাম, সয়াবিন।
ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় ও দাঁত গঠন, মায়ের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখা। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য (দই, পনির), সবুজ শাকসবজি (যেমন পালং শাক), সয়াবিন।
আয়রন (লৌহ) রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ, মা ও শিশুর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ। চর্বিহীন লাল মাংস, ডিম, শুকনো ফল (খেজুর, কিশমিশ), ডাল, সবুজ শাকসবজি, শিম।
ফলিক অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ। সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজি, ডাল, মটরশুঁটি, কমলালেবুর রস, শক্তিশালী সিরিয়াল।
শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) শরীরের জন্য শক্তির প্রধান উৎস। হোল গ্রেইনস (লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি), ওটস, আলু, কুইনোয়া।
ফ্যাট (স্বাস্থ্যকর) শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ, চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা। অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বর্জনীয় অ্যাভোকাডো, বাদাম ও বীজ, চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন), জলপাই তেল।
ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য এবং হাড়ের স্বাস্থ্য। চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, ভিটামিন ডি ফোর্টিফাইড দুধ। (পাশাপাশি প্রতিদিন কিছুটা সূর্যের আলো গ্রহণ করুন)।
ভিটামিন সি আয়রন শোষণ করে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। লেবু, কমলা, টমেটো, স্ট্রবেরি, ব্রোকলি ইত্যাদি

কোন সকল খাদ্য গর্ভাবস্থায় বর্জনীয়

কিছু পরিমাণে লোভনীয় খাবার রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় মাকে আকৃষ্ট করে কিন্তু তা উভয় মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে এই সকল খাদ্যকে অবশ্যই বর্জন করতে হবে । যেমন-

  • যেকোনো ধরনের প্রসেসড খাবার - যে খাবার গুলো অনেক দিন ফরমালিন এবং নাইট্রোজেন ব্যবহার করে সংরক্ষণ করা হয় সেগুলোকে প্রসেস অথবা রেডিমেড খাবার বলে । যেমন চিপস , ক্যান এ সংরক্ষিত খাবার , ফ্রোজেন সিঙ্গারা , পিজা ইত্যাদি
  • অর্ধ সিদ্ধ খাদ্য -ধাতকের সম্পূর্ণভাবে সেদ্ধ না করে তার মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া মা ও শিশুর যেকোনো ধরনের রোগ বালাই সংক্রমণের সহায়তা করবে । যেমন অর্ধ সিদ্ধ ডিম , সালাত সুশী ইত্যাদি জাতীয় খাদ্য ।
  • অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার - যে সকল খাদ্যে অতিরিক্ত তেল বা চর্বি রয়েছে যেমন অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস অথবা বাইরের বাসি ভোজ্য তেলের ডুবানো স্যাক্স ইত্যাদি । এসকল খাদ্য নিয়ন্ত্রিতভাবে বাচ্চার ওজন সময়ের পূর্বে বৃদ্ধি করে দিতে পারে । 
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার -  যে সকল খাদ্যে স্যাচুরেটেড সুগার অর্থাৎ অপরিমিত চিনি যুক্ত খাদ্য যেমন কোল্ড ড্রিংকস , প্যাকেট জাতীয় জুস ইত্যাদি । এসকল খাদ্য ও শরীরের হরমোনের ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয় অর্থাৎ ইনসুলিনের কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হারিয়ে দেয় । 
  • অ্যালকোহল ও ধূমপান - এ ধরনের খাদ্য নিকোটিন জাতীয় পদার্থ শিশুকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে ।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার - শিশুর অবস্থা নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর সেক্ষেত্রে কোনো কারণে যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা খাদ্য গ্রহণের কারণে মার ঠান্ডা লেগে যায় তবে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া সহজে শরীরে আক্রমণ করতে পারবে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর ।

গর্ভাবস্থায় খাদ্য গ্রহণের সাতটি গোপন টিপস

গর্ভাবস্থায় খাদক গ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া না হলেও বুদ্ধিমত্তার একটি খেলা । কোন সময় কিভাবে আপনি কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করলে আপনার শরীরের জন্য ভালো হবে নাকি মন্দ হবে তার ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান ধারনা রাখাই হচ্ছে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সর্বোত্তম কাজ । চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের সাতটি গোপনটি যেটি মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় খাদ্য গ্রহণ করলে আপনি সুস্থ ও শক্তিশালী শিশু প্রসব করতে পারবেন - 

শিশুর জন্য নয়, পুষ্টির জন্য খাদ্য গ্রহণ

অনেক সময় আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে গর্ভাবস্থাকালীন অবস্থায় যেহেতু দুইটি প্রাণ একসাথে থাকে তাই দুজনের সমান খাদ্য গ্রহণ করতে কিন্তু এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা । গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কোন খাদ্যের প্রয়োজন নেই । এর পরবর্তী তিন মাস তিনি 340 ক্যালোরি অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলেই চলবে এবং পরবর্তীতে যতটুকু প্রয়োজন শুধু ততটুকুই । অতিরিক্ত খাদ্য শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় বিপদ বাড়ায় মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিক উন্নয়ন নয় । আমাদের উচিত পুষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে গর্ভবতী মাকে খাদ্য দেওয়া নাকি খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ।

অল্প অল্প করে খাদ্য গ্রহণ

গর্ভকালীন অবস্থাতে কোনভাবেই একসাথে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না এটি হজমের জন্য সমস্যা হবে পরবর্তীতে কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা এবং ভ্রূণের ওপরে অযথা চাপ সৃষ্টি করবে । সেক্ষেত্রে একজন স্বাভাবিক মানুষ যদি দিনে তিন থেকে চার বেলা খাদ্য গ্রহণ করে তবে একজন গর্ভবতী মাকে তা রূপান্তরিত করে দিনে ছয় থেকে সাত বাড়ে খাওয়া উচিত । কোন অবস্থাতেই পেট ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখা যাবে না তাই অল্প অল্প করে পরিমাণ মতো ঘন ঘন খাদ্য গ্রহণ করতে হবে  । 

তরল ও নরম জাতীয় খাদ্য গ্রহণ

পরিপাকের জন্য গর্ভবতীর মাকে চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে । যেমন শক্ত শর্করা অর্থাৎ শক্ত ভাত বা রুটি এর পরিবর্তে নরম ভাত রুটি চাপিয়ে খেতে হবে , বেশি করে প্রোটিন জাতীয় সুপ গ্রহণ করতে হবে , যেকোনো ধরনের সালাত ভালোভাবে সিদ্ধ করে তারপর গ্রহণ করতে হবে এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতে হবে এতে শরীরে সহজে খাদ্য পরিপাক হবে এবং সকল মিনারেল সহজে শিশু পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হবে ।

ওমেগা 3 ও ফলিক এসিডের জোর দিন

যে সকল খাদ্যে ওমেগা 3 জাতীয় উপাদান সমৃদ্ধ যেমন সামুদ্রিক মাছ , যেকোনো মাছের তেল , ও ফলমূলে রয়েছে সে সকল খাদ্য ঘন ঘন এবং অবশ্যই পরিমাণ মতোভাবে একজন গর্ভবতী মায়ের গ্রহণ করা উচিত । অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা ক্ষতি হতে পারে । এর সাথে ফলিক এসিড উপস্থিত খাদ্য যেমন সবুজ শাক ও ডাল গ্রহণ করতে হবে যা শিশুর মস্তিষ্ক জোরদার করবে ।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন জাতীয় খাবারের সংযোগ রাখুন

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি শিশুর হাড্ডি শক্ত ও মজবুত করে সেক্ষেত্রে ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি থাকে তা গ্রহণ করতে পারেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে সকলের কুসুম রোধ গ্রহণ শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে পারেন । এছাড়া দুগ্ধ জাতীয় খাবার , দই, শাকসবজি থেকে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করা যেতে পারে ।

খাদে বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসা

বেশিরভাগ সময় গর্ভবতী মায়েদের খাবারের রুচির সমস্যা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে যদি সঠিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করে শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগবে । একটিমাত্র সমাধান হতে পারে তাতে বৈচিত্র্যতা যেমন শুধুমাত্র ডিমে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় না বিভিন্ন শাকসবজিতে পাওয়া যায় আবার শুধুমাত্র প্রোটিন মাছ-মাংস নয় ডাল এবং যেকোনো ধরনের বীজ এবং বিচিতে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বিচির ভর্তা বা সবজি রান্না করেও প্রোটিনের যোগান দেওয়া যেতে পারে । বৈচিত্র ময় খাদ্য গর্ভবতী মায়ের রুচিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং শিশুকে অপুষ্টি থেকেও বাঁচাবে ।

অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর খাবার পরিত্যাগ বাধ্যতামূলক

বাইরের রাস্তার উপরে বানানো ধুলাবালি সম্পূর্ণ ও ব্যাকটেরিয়াজনিত খাবার পুরোপুরি ভাবে ত্যাগ করতে হবে । অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মা এবং শিশু ব্যাকটেরিয়া মুক্ত সম্পূর্ণ সিদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করে । যে কোন ধরনের খোলা এবং পুরনো ভোজ্য তেলে ভাজা খাদ্য পরিত্যাগ করতে হবে ।

গর্ভাবস্থায় যে সকল খাদ্য এড়ালে ক্ষতি হয়

খাদ্য তালিকার মধ্যে বেশ কিছু খাদ্য রয়েছে যেগুলো কোনভাবেই এড়ানো সম্ভব নয় । যে সকল খাদ্যগুলো মস্তিষ্ক স্নায়ু এবং হাড্ডি এবং মাংস শক্ত করতে সাহায্য করে সে সকল খাদক কোনভাবেই এড়ানো যাবে না যেমন -

  • ফলিক এসিড - ফলিক এসিড জাতীয় খাবার এর অভাবে শিশুদের মস্তিষ্কের নায়কন্ত্রের ত্রুটিজনিত রোগ দেখা যায় ফলে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়
  • ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য - এটি শিশুর অস্থি এবং অস্থি মজা গঠনে সহায়তা করে সেক্ষেত্রে কোন বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এজন্য ঘরোয়া তোমাকে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত ।
  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার -আয়রনের অভাবে শিশু শরীরে রক্তের অভাবজনিত রোগ দেখা দিতে পারে সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই এটি বাদ দেওয়া যাবে না ।
  • ওমেগা 3 ফ্যাটিএসিড - শিশুর মানসিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্ক এর গঠন বৃদ্ধি করার জন্য করা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিডের বিকল্প নেই কারণ এটি অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় নয় বরং খারাপ চর্বিকে সরিয়ে ভালো চর্বিতে রূপান্তরিত করে শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । 

শিশুর মেধা বিকাশে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

শিশু এবং শিশু মায়ের জন্য গর্ভাবস্থা কালীন সময়ে মানসিক গুরুত্ব অপরিহার্য কেননা মা কি ধরনের চিন্তা ভাবনা করছে তার সম্পূর্ণ প্রভাব পড়ে তার গর্ভবতী শিশুর উপর ।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়.webp

একজন গর্ভবতী নারীর ওপরে নেগেটিভ তার সন্তানকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বিকল্প করে দিতেও সক্ষম । সেক্ষেত্রে - 
  • শিশু ও মাকে সবসময়ই খারাপ পরিবেশ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
  • গর্ভবতী কালীন সময়ে মায়ের উপরে অনেক হরমোনের প্রভাব পড়ে এবং হরমোন চেঞ্জ হতে থাকে সেহেতু মানসিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে । এই সময় পারিবারিক সহযোগিতা সর্বোত্তম চিকিৎসা হিসেবে গণ্য করা হয় ।
  • যে কোন ধরনের দুঃসংবাদ এবং হঠাৎ কোন খবর প্রকাশনার আগে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে হবে কারণ তা গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে এবং শিশুর উপরে তার ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে ।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

  • প্রথমত যোনিপথ দিয়ে রক্ত বের হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে 
  • অতিরিক্ত মানসিক প্রেসার চাপ এবং ঘাড়ের পিছনের অংশের টান অনুভব করলে প্রেসার মাপতে হবে এবং তা ১৬০ বাই ১০০ এর উপরে চলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
  • অতিরিক্ত জ্বর হলে এবং খিচুড়ির প্রভাব দেখা গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ।
  • অতিরিক্ত পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব দেখা দিলে । 
  • দীর্ঘদিন যাবত খাতে অরুচি দেখা দিলে কারণ এতে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে এবং হরমোনের  ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে
  • তীব্র মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা দিলেও ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে 
  • বাচ্চার নড়াচড়া কমে গেলে অথবা তা সংস্পর্শ প্রভাব বুঝতে না পারলে সাথে সাথে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে ।
  • যোনিপথ দিয়ে পানি অথবা অ্যামিনেটিক তরল বের হয়ে গেলে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ।

শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয় 

একটি গর্ভবতী মা ও শিশুর সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য নির্ভর করে একটি পরিপূর্ণ খাদ্য তালিকার উপরে । গর্ভাবস্থায় সঠিক ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে মা ও শিশু উভয় সুস্থ থাকে এবং যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা সহজে সম্ভব হয় । 

আশা করি উপরোক্ত আলোচনায় আপনারা ধারণা পেয়েছেন কিভাবে একজন নারী গর্ভাবস্থায় কোন সকল খাদ্য গ্রহণ করলে বাচ্চা বুদ্ধিমান সুস্থ ও সবল হবে । সর্বোপরি আমাদের সকলের একটাই উদ্দেশ্য প্রত্যেক শিশু ও মা সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করে সুস্থ সবল থাকে । আশা করি আবার কথা হবে আপনাদের সাথে ততদিন ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url