বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ- অবহেলা করলেই বিপদ
বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রধানত দেখা যায় জ্বর, কাশি, ঠান্ডা, পিঠে ব্যাথা। বেশিরভাগ সময়ে মানুষ এগুলোকে সাধারণ জর হিসেবে চিন্তা করে অবহেলা করে থাকে। কিন্তু এই ছোট ছোট কারণগুলোই শরীরের মধ্যে এক সময় বিশাল কোন রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
নিউমোনিয়ার উপসর্গ এবং লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীর স্বাস্থ্য দেখে ধারণা করা যায় না যে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এসব কিছু নির্ভর করে রোগীর বয়স, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর।
পোস্ট সূচীপত্র ঃ বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
- বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
- বড়দের নিউমোনিয়া সম্পর্কে মৌলিক ধারণা
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি ও জ্বর কি নিউমোনিয়া লক্ষণ
- আমরা কিভাবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারি
- নিউমোনিয়া থেকে প্রতিকার পাওয়ার ঘরোয়া উপায়
- নিউমোনিয়া হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- নিউমোনিয়া হলে বড়দের কি কি খাবার খেতে হবে
- নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের অন্যান্য সংক্রমনের মধ্যে পার্থক্য
- শেষ কথা
বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপরে নির্ভর করে থাকে। ব্যক্তিভিতে একেকজনের লক্ষণ একেক রকম হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী যে সকল লক্ষণ বেশি দেখা যায় সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
-
বড়দের ধীরে ধীরে অথবা আকস্মিক ভাবে জ্বর চলে আসতে পারে।
-
জরের তীব্রতা বেশিরভাগ সময় 105 থেকে 1008 ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে প্রথমে হালকা জ্বর এবং পরবর্তীতে জ্বরের মাত্রা বেশি হয়ে
যায়।
-
রোগীর প্রচন্ড পরিমানে কাশি হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘভাবে
শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকে চাপ দিয়ে কাশি আসতে পারে।
-
কাশির সাথে হালকা হলুদ অথবা সবুজে ভাব কফ আসে।
-
অনেক সময় কাশির সাথে হালকা রক্ত চলে আসে।
-
কাশির সময় প্রচন্ড পরিমাণে বুকে ও পিঠে ব্যথা হয়। যেমন মনে হয় পিন দিয়ে
অনেক জোরে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
-
রোগী আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে।
-
আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি হয় ফলে খাওয়ার অভাবে তাদের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং নিউমোনিয়া আরো জটিল করে বাসা বেধে
ফেলে।
- ওজন হ্রাস পায়।
-
হৃদস্পন্দন হালকা হতে শুরু করে।
-
নাক ঠোঁট অনেকটা নীলা ভাব তৈরি করে।
- রোগীর মানসিক পরিবর্তন শুরু হয় অর্থাৎ মানসিকভাবে সে দুর্বল হতে শুরু করে।
বড়দের নিউমোনিয়া সম্পর্কে মৌলিক ধারণা
নিউমোনিয়ার কারণ ও সংক্রমনের প্রক্রিয়া
- ব্যাকটেরিয়া জনিত নিউমোনিয়াঃ নিমোনিয়ার হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে এটি। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সহজে যে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। এটি বড়দের মধ্যে বেশি দেখার যায়। দ্রুত জ্বর কাশি ও মাথা ব্যথা হতে পারে।
- ভাইরাল নিউমোনিয়াঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনাভাইরাস, আরএসবি ইত্যাদি ভাইরাসের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। সাধারণত জ্বর ঠান্ডা কাশি থেকে শুরু হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
- ছত্রাক জনিত নিউমোনিয়াঃ দুর্বল রোগ প্রতিরোধী মানুষদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। অনেক সময় আগে থেকেই সাধারণ জ্বর ঠান্ডা জড়িত কারণে আক্রান্ত থেকে পরবর্তীতে নিউমোনিয়ার আকার ধারণ করতে পারে। এটি সাধারণত ছত্রাক জনিত নিউমোনিয়ার কারণে হয়ে থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী কাশি ও জ্বর কি নিউমোনিয়া লক্ষণ
আমরা কিভাবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে পারি
- নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিনঃ সাধারণত ফুসফুসের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে তথা নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া এর জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
- ফ্লূ ভ্যাকসিনঃ ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া ঠেকানোর জন্য এই ভ্যাকসিন নিতে হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন কারণ তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
নিউমোনিয়া থেকে প্রতিকার পাওয়ার ঘরোয়া উপায়
-
নিউমোনিয়া থেকে প্রতিকার পাওয়ার প্রথম উপায় হল যে কোন ধরনের
অসুস্থ পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।
-
যে কোন জায়গায় যাওয়ার আগে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক হিসেবে গ্রহণ
করতে হবে এবং ফেরত আসার পরে অবশ্যই অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড
স্যানিটাইজার দিয়ে স্যানিটাইজ করতে হবে।
-
সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মহল গড়ে তুলতে হবে।
-
বাইরে খাওয়া দাওয়া এবং বিনা কারণে যে কোন জায়গার জনসমাগম এগিয়ে
চলতে হবে।
-
অবশ্যই সর্বপ্রথম ধূমপান করা বন্ধ করতে হবে। কেননা সিগারেটে থাকা নিকোটিন
ফুসফুসকে অনেক বেশি দুর্বল ও এর ক্ষতি করে থাকে তাই সহজে যেকোনো ধরনের
নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া ফুসফুস কে আক্রান্ত করতে পারবে এবং আক্রান্ত
ব্যক্তি এর ওপর সহজে কোন ওষুধ কাজ করবে না ফলে তার প্রতিরোধক ব্যবস্থা
বিফলে যাবে এবং সহজে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়বে।
-
কোন ধরনের মাদকপণ্য গ্রহণ করা যাবে না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে
যায়।
-
সবসময় একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। সুস্থ পরিবেশ, ব্যায়াম এবং
সুশৃংখল খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
-
কোভিড আক্রান্ত অথবা ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকতে
হবে।
- যদি কোন সময় ঠান্ডা জ্বরের মাত্রা বেড়ে যায় তবে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নিউমোনিয়া হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
অবশ্যই শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যখন মনে হবে যে কাশি পনেরো দিনের বেশি হয়ে যাচ্ছে এবং জ্বর ৭ দিন ১০৪ ডিগ্রি এবং পরবর্তীতেও অভ্যায়মান থাকছে ও কাশির সাথে অনেকটা হলুদ বা সবুজে ভাব কফ অথবা কফের সাথে সামান্য পরিমাণে রক্ত যাচ্ছে তখন যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
নিউমোনিয়া হলে বড়দের কি খাবার খেতে হবে
নিউমোনি থেকে রক্ষা পেতে হলে রোগীকে সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে সঠিক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু শুধুমাত্র ওষুধের উপর নির্ভর করে থাকলে নিউমোনিয়া থেকে সেরে ওঠা অনেক জটিল হয়ে যায়।
- ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সব সময় সুষম খাদ্য দেওয়া উচিত। কারণ সুষম খাদ্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই এটি নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
-
রোগীর খাবার রে তিন বেলার মধ্যে দুই বেলায় অবশ্যই আমিষ রাখা উচিত। আমিষ
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ইমিউনিটি শক্ত করে, তাপ
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়।
-
খেতে পারে না বিধায় রোগীকে বেশি করে মুরগির মাংসের সাদা সুপ বানিয়ে
দেওয়া উচিত।
-
অবশ্যই বেশি করে রোগীকে ফল খাওয়াতে হবে। ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং খনিজ
নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন
করে থাকে।
-
এই সময় প্রচুর পরিমাণে ডি হাইড্রেশন হয় সেজন্য রোগীকে ঘন ঘন পানি
খাওয়াতে হবে।
-
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিয়ে তথ্য হিসেবে
রোগীর খাবার ভালোভাবে দিতে হবে।
নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের অন্যান্য সংক্রমনের মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | নিউমোনিয়া | অন্যান্য ফুস্ফুসের সংক্রামণ | |
---|---|---|---|
সংজ্ঞা | ফুস্ফুসের বায়ুথলিতে সংক্রামণ | শ্বাস নালী ব্রঙ্কি বা অন্যান্য ফুসফুসের অংশ সংক্রমণ | |
আক্রান্ত অংশ | মূলত ফুস্ফুসের গভির অংশে | ব্রংকিয়াল বা ট্রাকিয়া তে | |
কারণ | ব্যাকটেরিয়া, ভাইরা্স, ছত্রাক | ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এলার্জিন | |
লক্ষণ | জর,কাশি,শ্বাস কষ্ট,বুকে ব্যাথা | সর্দি, শুকনো কাশি হালকা জ্বর, বুকে ব্যথা তুলনামূলক কম | |
গুরুত্ব | গুরুতোর সংক্রমণ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে | বাড়িতেই বিশ্রামে সুস্থ হয় | |
নির্ণয় পরিক্ষা | বুকের এক্সরে, কফ পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা | সাধারন পরিক্ষা | |
চিকিৎসা | এন্টিবায়োটিক, | সাধারণ ঔষধ, | |
কারা বেশি ঝুকিতে | যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম | সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতেও সেরে ওঠে |
শেষ কথাঃ বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
বড়দের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ বেশিরভাগ সময় প্রকাশ পায় না কারণ তাদের মধ্যে ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো থাকে তারপরেও নিউমোনিয়া একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হওয়ার কারণে বড় থেকে ছোট সকল বয়সের জন্য এটি একটি ভয়ানক রোগ। নিউমোনিয়া সরাসরি ফুসফুসে আঘাত করে যার ফলে জ্বর ও ঠান্ডা ৭ অথবা ১৫ দিনের মধ্যে ভালো না হয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত রোগীকে ভোগায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url